পড়ুয়া

Share this post

সম্পাদকীয়

www.porua.net

Discover more from পড়ুয়া

বই নিয়ে পাঠকের আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো প্রকাশের তেমন সুযোগ থাকে না। পাঠকের বলা না হয়ে ওঠা সেইসব কথাগুলো প্রকাশের ভাবনা থেকে আমরা শুরু করছি পাঠকের জন্য "পড়ুয়া"।
Over 2,000 subscribers
Continue reading
Sign in

সম্পাদকীয়

Riton Khan
Jan 5, 2023
Share this post

সম্পাদকীয়

www.porua.net
Share
সম্পাদকীয় বর্ষ ২ সংখ্যা ১

কালস্রোতে সবকিছু হারিয়ে গেলেও লাইব্রেরি কিন্তু মানুষের জীবনে এক শাশ্বত আলোক উৎস। মানুষের অগ্রগতিতে লাইব্রেরি এক আলোক দিশারী। তমসাবৃত যুগ পেরিয়ে মানুষ ধারাবাহিকভাবে এগিয়েছে আরও এক আলোকিত সভ্যতার দিকে। এই আবহমান বিশ্ব-সংস্কৃতিতে লাইব্রেরির চলমান রূপটিই প্রকাশিত।

লাইব্রেরি মানব সভ্যতার এক বিশাল আকর ভাণ্ডার, যাতে ওতপ্রতোভাবে মিশে আছে তথ্য ও উদ্ভাবনা, ধূসর ও ধূসরতর স্মৃতিসমূহ-বস্তুত মানব সভ্যতা ও সংস্কৃতি তথা সামাজিক অগ্রগতির ইতিহাসে লাইব্রেরির একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। একাধারে আদিম ও চিরন্তন, চিরপুরাতন ও চিরনতুন সেই লাইব্রেরি। লাইব্রেরির অস্তিত্ব কোন একক বা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, সুদূর অতীত থেকে আধুনিক কাল, এমন কি, আগামী কালেও সামাজিক বিবর্তনে লাইব্রেরি সমাজদেহের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবেই বিবেচিত হবে। সভ্যতার প্রয়োজনেই লাইব্রেরির উন্মেষ। শিক্ষা সংস্কৃতির অঙ্গ, জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। জীবন ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশেই লাইব্রেরির ভূমিকা স্পষ্টভাবে উচ্চারিত।

প্রথম যখন লাইব্রেরি সৃষ্টি হয়েছিল তখন মানুষের জীবনে এর প্রভাব এবং উপযোগিতা কতখানি বিবেচিত হবে সে সম্বন্ধে হয়তো লাইব্রেরির আদি নির্মাতার কোন স্পষ্ট ধারণা ছিল না। কিন্তু নিঃসীম সময়ের স্রোতে এবং পরিবর্তিত সমাজ ব্যবস্থায় লাইব্রেরির ভূমিকা আরও দৃঢ় এবং অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছে। রাষ্ট্র তার অতীতের একনায়কতন্ত্রের স্বেচ্ছাচারিতার দৃঢ় বাঁধন ছিড়ে ক্রমশ মানুষের সার্বিক কল্যাণে ব্রতী হয়েছে। অন্ধকার, অত্যাচার, কুসংস্কার এবং ধর্মীয় গোঁড়ামি একসময় মানুষকে অসহিষ্ণু ও অমানবিক করে তুলেছিল। কিন্তু মানুষ তো অন্ধকারের প্রাণী নয় সে আলোক পথচারী। মানুষের এই আলোকিত তপস্যার প্রথম ও প্রধান অগ্নিস্ফুলিঙ্গ সে লাইব্রেরি থেকে আহরণ করেছে। কেননা সভ্য মানুষের জ্ঞানপিপাসার চিরন্তন আধার এই লাইব্রেরি।

মানুষ ও সমাজের মঙ্গল সাধনের জন্যই লাইব্রেরির অস্তিত্ব। আপাতদৃষ্টিতে লাইব্রেরি একটি স্থিতিশীল বস্তু বলে মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে তার মধ্যে একটি সজীব গতিময় সত্তার অস্তিত্ব রয়েছে, কেননা বইই মানুষের উপলব্ধির ধারক ও বাহক, বইয়ের মাধ্যমেই মানুষের প্রতিভার স্পন্দন অনুভূত হয়। অফুরান প্রাণের ঐশ্বর্য সেখানে স্হির থাকে। লাইব্রেরি একটি আলোকিত রত্নভাণ্ডারের মতো সেখান থেকে একটি একটি করে নিটোল রত্ন তুলে মানুষ নিজেকে সম্পদশালী বলে প্রতিপন্ন করে। কিন্তু বাস্তবে হয়তো বা কখনো কখনো অন্য দৃশ্য দেখা যায়। লাইব্রেরি এই শব্দটি উচ্চারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কখনো কখনো মানুষের সামনে ভেসে ওঠে একটি পুরাতন ভবন, অচ্ছেদ্য অন্ধকার, ধুলোর ঝালর, কিছু পুরাতন আসবাব এবং অসংখ্য জীর্ণ অবিন্যস্ত ও অবহেলিত পুস্তক সম্ভার। এধরণের একটি ম্লান ছবি কি মানুষের চোখে দেখাতে পারে আশার আলো, না তার মনে স্বপ্নের বীজ রোপণ করতে পারে? সুদূর অতীতের কিছু কিছু লাইব্রেরির দৈন্যদশা পাঠককে আহত করলেও বর্তমানে তার ছবিটি অত ম্লান এবং অস্পষ্ট নয়। কেননা, মৃত লাইব্রেরি কখনোই চলমান মানুষের সামনে জীবনের আলোকিত সম্ভার তুলে দিতে পারে না।

আশার কথা, লাইব্রেরির অগ্রগতি অব্যাহত রয়েছে এবং মানুষের সঙ্গে দরদী লাইব্রেরিয়ানের আত্মিক যোগাযোগও রয়েছে। কোন একটা বিশেষ দেশ বা বিশেষ কালের মধ্যে লাইব্রেরির অস্তিত্ব এবং তার প্রভাব সীমাবদ্ধ নয়। সর্বকালের সমস্ত সমাজের অগ্রগতিতে লাইব্রেরি নিজেকে ছড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিস্তারে সে নিজেকে বিশ্বমুখী করে তুলেছে। ব্যক্তির চিন্তাকে সমাজে প্রতিফলিত করে, সমাজ থেকে তাকে প্রতিবিম্বিত করেছে সমস্ত দেশে এবং সেই প্রতিবিম্বই প্রসারিত সারা পৃথিবীতে। নিরক্ষরতা দূরীকরণ, পুস্তক প্রকাশনা, ভিন্নধর্মী পাঠ্যপুস্তকের প্রতি পাঠকের অনুরাগ সৃষ্টি, তথ্য বিস্ফোরণে সজাগ আগ্রহ এবং সর্বোপরি সভ্যতার অগ্রগতিতে সামাজিক প্রতিষ্ঠানরূপে বিশ্বব্যাপী লাইব্রেরির প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

সব দেশেই সমাজের সকল স্তরে জ্ঞান ও শিক্ষাকে সমানভাবে বিতরণ করতে উৎসুক, দেশের প্রগতির পথে শিক্ষার এই প্রসার একটি অত্যাবশ্যকীয় পদক্ষেপ। নিরুৎসুক মানুষকে উৎসুক করে তোলা এবং আগ্রহী পাঠককে জ্ঞানার্জনে আরও বেশি উৎসাহী করা আধুনিক লাইব্রেরির অন্যতম কর্তব্য হিসেবে স্বীকৃত হয়েছে। তাই এই নুতন পরিবেশে লাইব্রেরি শুধু জ্ঞানের ভাণ্ডার নয়, জ্ঞানের দিশারীও বটে। লাইব্রেরিকে বিচ্ছিন্ন প্রতিষ্ঠান হিসেবে না ভেবে তাকে মানুষের সার্বিক মঙ্গলের জন্য সমাজের একটি বিশেষ অঙ্গ হিসেবে চিহ্নিত করতে হবে।

পৃথিবীর প্রগতিশীল দেশগুলিতে লাইব্রেরি আজকাল একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান হিসাবে স্বীকৃত। সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে লাইব্রেরির নতুন মূল্য দেখা দিয়েছে। জনসংযোগের যে কটি উপায় বর্তমানে চর্চিত তাদের মধ্যে লাইব্রেরি অন্যতম। প্রসঙ্গত প্রমথ চৌধুরীর একটি উক্তি স্মরণ করা যেতে পারে "এদেশে লাইব্রেরির সার্থকতা হাসপাতালের চাইতে কিছু কম নয় এবং স্কুল ও কলেজের চাইতে কিছু বেশী...আমার বিশ্বাস, শিক্ষা কেউ কাউকে  দিতে পারে না। সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত।...শিক্ষক ছাত্রকে পথ দেখিয়ে দিতে পারেন না।...আমি লাইব্রেরিকে স্কুল কলেজের উপরে স্থান দিই এই কারণে যে, এস্থলে লোকে স্বেচ্ছায় স্বচ্ছন্দচিত্তে স্বশিক্ষিত হবার সুযোগ পায়, প্রতি লোক তার স্বীয় শক্তি ও রুচি অনুসারে নিজের মনকে, নিজের চেষ্টায় আত্মার রাজ্যে জ্ঞানের পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।”

লাইব্রেরি মানুষকে তার আত্মিক অন্বেষণের পথনির্দেশ করে যা ক্ষুধা-তৃষ্ণা, শ্বাস-প্রশ্বাসের মতোই একান্ত জরুরি।

Share this post

সম্পাদকীয়

www.porua.net
Share
Previous
Next
Comments
Top
New
Community

No posts

Ready for more?

© 2023 Riton Khan
Privacy ∙ Terms ∙ Collection notice
Start WritingGet the app
Substack is the home for great writing