পাঠাগার হচ্ছে জ্ঞানচর্চার অন্যতম কেন্দ্র। জ্ঞানের বাতিঘর। যা সমাজের চারপাশে ছড়িয়ে গিয়ে পুরো সমাজকে আলোকিত করে। পাশাপাশি একটি পাঠাগার সমাজে শিক্ষিত সচেতন নাগরিক গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর এই লক্ষ্যেই আমাদের গ্রাম চাঁদপুর জেলার সিকিরচরে ২০১০ সালের ৩০ অক্টোবর "আমাদের পাঠাগার" প্রতিষ্ঠা করেছি। বছরের হিসেবে পাঠাগার প্রতিষ্ঠার এগার বছর পূর্ণ হলো। এই এগার বছরে আমাদের পাঠাগার কতটা সাফল্যলাভ করেছে, সমাজে কতটা আলো ছড়াতে সক্ষম হয়েছে, তার একটা পরিসংখ্যান দিতে ইচ্ছে করছে। তার আগে বলে রাখি, প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে এবং প্রতিবছর প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালায় এ পর্যন্ত দেশের খ্যাতিমান লেখক-সাংবাদিকগণ যোগ দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন কবি নির্মলেন্দু গুণ, লেখক-গবেষক এবং উদিচির বর্তমান সভাপতি ড. সফিউদ্দিন আহমেদ, লেখক বিপ্রদাশ বড়ুয়া, কবি নূরুল হুদা, শিশুসাহিত্যিক আলী ইমাম, কথাশিল্পী ও মুক্তিযোদ্ধা ইসহাক খান, লেখক- অভিনেতা খায়রুল আলম সবুজ, কবি আসলাম সানী, শিশুসাহিত্যিক ফারুক নওয়াজ, ছড়াকার হাসনাত আমজাদ, ছড়াকার আলম তালুকদার, শিশুসাহিত্যিক আশরাফুল আলম পিনটু, প্রচ্ছদশিল্পী ধ্রুব এষ, শিশুসাহিত্যিক শ্যামলী খান, সোহেল মল্লিক, কথাশিল্পী মনি হায়দার, শাহনেওয়াজ চৌধুরী, কবি নীহার মোশারফ, কবি রুহুল ফরাজী, প্রকাশক নেতা ও রাজনীতিক আলমগীর সিকদার লোটন, প্রকাশক কাজী জহুরুল বুলবুল প্রমুখ।
পাঠাগার বা গ্রন্থাগার হলো বইপত্র ও অন্যান্য তথ্য সামগ্রির একটি সংগ্রহশালা। যেখানে পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং পাঠক সেখানে পাঠ, গবেষণা কিংবা তথ্যানুসন্ধান করতে পারেন। সেই অর্থে আমাদের পাঠাগার নিছক একটি পাঠাগার বা গ্রন্থাগারই নয় কিংবা পাঠাগারের সেলফে বই রেখে পাঠকদের বই পাঠের সুযোগ করে দেওয়াই মূল লক্ষ্য নয়। কেননা, একজন পরিপূর্ণ শিক্ষিত সচেতন নাগরিক হিসেবে সমাজে বসবাসের জন্য নানামুখি যোগ্যতা অর্জন করতে হয়। অর্জন করতে হয় মানবিক গুণাবলি, জনহিতকর স্বেচ্ছাসেবার মানসিকতা, কুসংস্কারমুক্ত সমাজ নির্মাণে আত্মপ্রত্যয়ী, দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ জনশক্তি গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা, শিশুদেরকে দেহে-জ্ঞানে ও মনে-মননে স্বাস্থ্যবান করে গড়ে তোলার প্রত্যয়। সে লক্ষ্যেই আমাদের পাঠাগার প্রতিষ্ঠার পর থেকে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় দিবস সমূহ উদযাপন, বাৎসরিক সাঁতার প্রতিযোগিতা, মেডিক্যাল ক্যাম্প করে গরীব রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দান, বিনামূল্যে বই বিতরণ, বইপাঠ প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন, আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে বাউল গানের আসরসহ নানাবিধ অনুষ্ঠান করে যাচ্ছে। অর্থাৎ সকল ভালোর সাথে আমাদের পাঠাগার।
আমি মনে করি, প্রতিটা পাড়া ও মহল্লায় পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করা জরুরি। এমনকি নব্য ফ্ল্যাট কালচারের যুগে ফ্ল্যাট ও হাউজিং সোসাইটিসমূহে পাঠাগার থাকা বাধ্যতামূলক করা উচিত। সুস্থ্য জাতিগঠনে বইপাঠের বিকল্প নেই। যদিও সরকারের জাতীয় গ্রন্থাগার নীতিতে দেশের প্রতি এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে একটি পাঠাগার স্থাপনের কথা উল্লেখ রয়েছে। তবে এই নীতি শুধু কাগজেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবতা ভিন্ন। ক্রসফায়ারে মাদক কারবারী মারা গেলেই যে সমাধান আসবে, আমি মনে করি না। নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আমাদের মন। যেন বর্তমান প্রজন্ম মাদকের দিকে ধাবিত না হয়ে বই পড়ার বেশি বেশি আগ্রহী হয়ে ওঠে। বই-ই পারে সুন্দর আগামি তৈরিতে সাহায্য করতে।
লেখকঃ আমাদের পাঠাগারের প্রতিষ্ঠাতা
বাংলাদেশ