

Discover more from পড়ুয়া
সেই কোন ছোটোবেলা থেকে গল্পের বই পড়া শুরু করেছি এখন আর তা ঠিক মনে করতে পারবো না। তবে অনেক ছোটো থেকেই গল্প শুনতাম মা বাবা বোন এঁদের কাছ থেকে। যেজন্য বই এর প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষণ বরাবরের।
তখন আমি খুব ছোটো। অক্ষর পরিচয় সবে শুরু হয়েছে। তখন আমার জীবনে প্রথম গল্পের বই হাতে পাওয়া। কোনো এক ঈদে আমার সেজো ভাই আমাদের দুইজনকে বই দিলেন। “রাশিয়ান উপকথা”। আমাদের দুজন বলতে আমি আর আমার তিন বছরের বড় ভাই তাকে। ও তখন বানান করে পড়তে শিখেছে। আর আমি পড়তে না পারলেও পাতার পর পাতা উল্টে যে পাতায় যা আছে তা অবলিলায় বলে যেতে পারি। তো এই বয়সে রাশিয়ান বই, যার পাতায় পাতায় রঙিন ছবি। ছবি দেখেই কেটে যায় সময়। আমরা যারা ওই সময় রাশিয়ান বই পড়েছি তারা বলতে পারবো কি অসম্ভব সুন্দর ছিলো এইসব বই। সেজ ভাই আমাকে দিলো “হলদে ঝুঁটি মোরগ টি”, আর আমার ভাইকে দিল “নানা চাকা নৌকা”।
জীবনে প্রথম গল্পের বই! তাও আমার নিজের! আমি তো বইয়ের রঙিন ছবি নিয়ে ব্যস্ত। কি যে সুন্দর মোরগের ছবি,বিড়ালের ছবি,শিয়ালের ছবি। আর ভাইয়ের বইতে খরগোশ, ব্যাঙ। কিছু অসমান চাকা, এগুলির ছবি। আমার ইমিডিয়েট বড় ভাইও তো বানান করে পড়তে শিখেছে। নিজের বই এর নামটা ঠিকঠাক পড়ে আমার বই নিলো। বেশ গম্ভীর ভাবে বানান করলো। তারপর উচ্চারণ করলো: “হলদে ঝুঁটি মোরগো টি”।
এতো গেল আমার জীবনের প্রথম গল্পের বইয়ের কথা। তারপর কত যে বই পড়েছি তার ঠিক নেই। আনন্দ, বেদনা,কষ্ট কত কী তো বই পড়ে পেয়েছি। সেই তখন থেকে এখনো বই না হলে একটা দিনও চলে না। আমার জীবনের সাথে প্রেমিকের মতো জড়িয়ে আছে বই। বেশ মনে আছে আমি তখন ইন্টারমিডিয়েট ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি। সেদিন ঝুম বৃষ্টি। কলেজ নাই। আমি দিলারা হাশেমের লেখা “ঘর মন জানলা” বইটা নিয়ে খাটের উপর শুয়ে পড়ছি। বাইরে অঝোর ধারায় বৃষ্টি। বইয়ের মাঝ বরাবর এসে নায়িকার কষ্টে আমার অসহ্য কষ্ট হলো। বইয়ের মাঝে ওই সময়েও বৃষ্টি হচ্ছে। নায়ক তার ঘরের টবগুলি বৃষ্টির ভিতর ছুঁড়ে ফেলছে। আমি কষ্ট সহ্য করতে পারলাম না। কী এক অসহ্য কষ্টে ডুবে গেলাম। বালিশের পাশে বই নামিয়ে রেখে হাপুশ নয়নে কাঁদতে লাগলাম। যেন আমার প্রিয়জন কেউ মারা গেছে। কী কষ্ট কী কষ্ট! বুকের ভিতর ব্যথা করতে লাগলো। কান্না শেষ হলে আবার বই পড়তে শুরু করলাম।
জীবনে বই পড়ে এভাবে অনেকবার কষ্টে ডুবেছি কিন্তু ওই দিন আমাকে যেভাবে কাঁদিয়েছে সে রকম আর হয়নি।