পড়ুয়া

Share this post

বই আছে, সময় নেই

www.porua.net

Discover more from পড়ুয়া

বই নিয়ে পাঠকের আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো প্রকাশের তেমন সুযোগ থাকে না। পাঠকের বলা না হয়ে ওঠা সেইসব কথাগুলো প্রকাশের ভাবনা থেকে আমরা শুরু করছি পাঠকের জন্য "পড়ুয়া"।
Over 2,000 subscribers
Continue reading
Sign in

বই আছে, সময় নেই

হারুন রশীদ | তাদের কথা বলি যারা পড়তে ইচ্ছুক, কিন্তু হাতে যথেষ্ট সময় থাকে না জীবিকার কাজে ব্যয় করতে গিয়ে। আমি একটা দীর্ঘ সময় সকালসন্ধ্যার কর্পোরেট চাকরীতে ব্যয় করেছি। দুই দশকের সেই সময়কালে বই আমার

Apr 27, 2023
Share this post

বই আছে, সময় নেই

www.porua.net
Share

কত কত বই জমে আছে! এত বই পড়ার সময় কই? সীমিত আয়ুষ্কালে এতসব বই কী পড়া শেষ করা যাবে? পড়তে পড়তে প্রায়ই এই দুশ্চিন্তাটা মাথাচাড়া দেয় পড়ুয়াদের। বিশেষ করে সেই পড়ুয়া যারা ‘বেঁচে থাকার জন্য পড়ে’ কিংবা ‘পড়ার জন্য বেঁচে আছে’। পড়াশোনা ব্যাপারটা তাদের কাছে বেঁচে থাকার অক্সিজেনের মতো। বইয়ের কাছে না থাকলে এরা রীতিমত হাঁসফাস করে।

সময় কম, বই বেশী। কম সময়ে বেশী বই পড়ে এগিয়ে থাকার যুদ্ধে চাপটা এসে পড়ে দৃষ্টিশক্তির উপর। লক্ষ যদি হয় বেশীদিন পড়া, তাহলে চোখকে বাঁচাতে হবে। অন্য যেসব কাজে আমাদের চোখ ব্যবহার করতে হয় সেসব কাজ কমিয়ে বইয়ের খাতে বেশী বরাদ্দ রাখতে হবে। সেটা কী আদৌ সম্ভব? ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের চোখ গড়ে ৮ ঘন্টা বন্ধ থাকে ঘুমের জন্য। কমপক্ষে ৮ ঘন্টা জীবিকার কাজে লাগে। বাকী থাকে ৮ ঘন্টা। এই ৮ ঘন্টার মধ্যে স্নাহাহার, যাতায়াত এসবে ৪ ঘন্টা (ঢাকা শহরে যাতায়াত বাবদ আরো বেশী খরচ হয়)। বাকী থাকলো ৪ ঘন্টা। এই চারঘন্টা ভাগাভাগি করতে হবে পরিবার, বন্ধুবান্ধব, অতিথি, আড্ডা, ফেসবুকসহ নানান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইত্যাদির মধ্যে। সবাইকে সময় দিতে গেলে বই পড়ার জন্য দৈনিক আধঘন্টা সময়ও কি মিলবে? গাণিতিক হিসেবে বই পড়ার জন্য কোন সময় খুঁজে পাওয়া যায় না।

পেশাজীবি কিংবা কর্মজীবিদের বই পড়ার জন্য আসলেই আলাদা কোন সময় নেই। যারা ছাত্র, বেকার, অবসরভোগী, তাদেরকে এই হিসেবে আনছি না। তাদের বই পড়ার জন্য ইচ্ছা এবং সামর্থ্য দুটো থাকলেই পড়তে পারে। এর মধ্যে ‘ইচ্ছা’ ব্যাপারটি সহজ নয়। যে কেউ ইচ্ছা করলেই বই পড়তে পারে না। বই পড়ার একটা সামর্থ্য লাগে। সেই সামর্থ্য সবার থাকে না। এটা আর্থিক সামর্থ্য নয়, বই পড়ার সামর্থ্য। পড়তে পারে, লিখতে পারে, শিক্ষিত মানুষ, কিন্তু হাতে বই ধরিয়ে দিলেই তিনি পড়বেন না। পড়ার সামর্থ্য হয়ে ওঠেনি তাঁর। জীবনে পাঠ্যবইয়ের বাইরে কখনো কিছু পড়েনি তেমন লোকের সংখ্যাই সংসারে বেশী। বই পড়ার সামর্থ্য একটা বিশাল ব্যাপার এটা সবাই বুঝবে না। সেই সামর্থ্য নেই বলে ঘরে ঘরে নানান দামী আসবাবে পরিপূর্ণ থাকলেও একখানা বুকশেলফ নেই ৯৫% মানুষের ঘরে।

অনিচ্ছুকদের কথা থাকুক। তাদের কথা বলি যারা পড়তে ইচ্ছুক, কিন্তু হাতে যথেষ্ট সময় থাকে না জীবিকার কাজে ব্যয় করতে গিয়ে। আমি একটা দীর্ঘ সময় সকালসন্ধ্যার কর্পোরেট চাকরীতে ব্যয় করেছি। দুই দশকের সেই সময়কালে বই আমার কাছ থেকে প্রায় নির্বাসনে চলে গিয়েছিল। আমার ঘরে থরে থরে বই আছে বুকশেলফে, কিন্তু বই হাতে নেবার সময় ছিল না। সকাল সাড়ে ছটায় উঠে অফিসে ছুটতাম ফিরতাম রাত আটটা কিংবা দশটায়। ক্লান্ত শরীরে বই হাতে নেবার কোন শক্তি থাকতো না। মেলা থেকে বই কিনে কিনে সাজিয়ে রাখতাম, পড়ার সুযোগ নেই। তখন মাথার ভেতর প্রায়ই ঘুরতো প্রিয় কোটেশান I still find each day too short for all the thoughts I want to think, all the walks I want to take, all the books I want to read, and all the friends I want to see…..এর মধ্যে অল দ্য বুকস….না পড়া বইগুলার কথা বেশী ঘুরতে থাকে।

সেরকম পাঠবন্ধ্যা সময়ে দেখা হলো পড়ুয়া এক বন্ধুর সাথে। সে আমার কানে বই পড়ার নতুন একটি মন্ত্র তুলে দিল।

‘ঘুম থেকে ওঠার পর বইয়ের সাথে কিছুক্ষণ। ঘুমোতে যাবার আগে বইয়ের সাথে কিছুক্ষণ।’ মন্ত্রটি আমাকে দারুণ মোহিত করলো। আমি একটা নতুন জীবন পেলাম। বই আবারো কাছাকাছি চলে এলো আমার। প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে তার সাথে আমার দেখা হয়, আমার দিন শুরু হয় তাকে নিয়ে। সারাদিন কর্মবহুল সময় কাটাবার পর আবারো তার সাথে দেখা হয় আমার। প্রতিদিন তার সাথে অন্তত ঘন্টাখানেক কাটিয়ে আমি ঘুমের দেশে রওনা হই। দিনের শুরু এবং শেষাংশ তার সাথেই কাটতে শুরু করে আমার নতুন জীবন। প্রিয় বন্ধুটির এই মন্ত্র আমাকে পাঠবন্ধ্যা জীবন থেকে ফিরিয়ে আনে। আবারো আমি প্রতিনিয়ত বইয়ের সাথে বাস করতে শুরু করি।

পড়ুয়া জীবনের দ্বিতীয় পর্বে এসে পড়াশোনার নতুন প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হতে থাকি। এ পর্বে কাগজের বই বাদেও ইবুক পড়ার অভ্যেস চালু হয়। কাগজের বই পড়ার সুযোগ সবসময় থাকে না। সাথে সবসময় বই রাখা সম্ভব না। কিন্তু আমরা জেগে থাকার প্রায় সারাক্ষণই কোন না কোন ইলেকট্রনিকস ডিভাইসের সাথে যুক্ত থাকি। হয় মোবাইল, নয় ল্যাপটপ কিংবা কিণ্ডল বা ইবুক রিডার। ইবুক প্রযুক্তি আমার পড়ার সুযোগকে তিনগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। ২৪ ঘন্টার সীমিত বাজেটের মধ্য থেকে আমি সময় চুরি করতে থাকি। কিছু সময় চুরি করি ঘুমের কাছ থেকে, কিছু সময় চুরি করি অফিসের কাজের অবকাশ থেকে, কিছু সময় চুরি করি পারিবারিক আড্ডা থেকে। যখন যে ডিভাইসের সাথে থাকি- সেই ডিভাইস থেকে বই পড়ি।

অফিস সময়ে সবাই সারাক্ষণ কাজ করে না। কিছু না কিছু সময় গুলতানি বা অলস সময় কাটায় সবাই। সেই সময়টাতে আমি ল্যাপটপে কোন একটা ইবুক খুলে বসি। অফিস সময় থেকে বই পড়ার ঘন্টাখানেকের সময় বের হয়ে যায়। পথে যানজটে প্রতিদিন দুই ঘন্টা গাড়িতে বসে থাকতে হয়। সে সময় মোবাইলটা খুলে ইবুক পড়ি আমি। কোন অনুষ্ঠানে, ওয়েটিং রুমে, যেখানে দীর্ঘ সময় বসে থাকতে হয় সেখানে মোবাইলে আমি বইটা খুলে বসি। কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি পাঁচ ঘন্টার দীর্ঘ যাত্রা। সাথে কিণ্ডলটা রাখি। পড়তে পড়তে দীর্ঘ যাত্রার ক্লান্তি উড়ে যায়। মোদ্দাকথা যতক্ষণ জেগে থাকি ততক্ষণ যেন চোখটা কোন না কোন পড়ার সাথে যুক্ত থাকে।

পড়ুয়া is a reader-supported publication. To receive new posts and support my work, consider becoming a free or paid subscriber.

সময় যোগাড়ের আরেকটি বড় খাত হলো অপেক্ষা। অপেক্ষা একটা বিরক্তিকর বিষয়। সেই সময়টা একেবারেই বেকার। যে কোন অপেক্ষার সময় থেকে আমি বই পড়ার সময় কেড়ে নেই। কোথাও গিয়ে অলস বসে থাকার মতো অপচয় আর কিছু নেই। অপেক্ষার সময় থেকে সবচেয়ে বেশী সময় কেড়ে নেয়া যায়।

নানান খাত থেকে সময় চুরি করে বই পড়ার জন্য ইবুক সবচেয়ে ভালো বন্ধু। ইবুকের সুবিধা হলো একই বই কপি করে নানান জায়গায় রাখা যায়। আমি একই বই ল্যাপটপ, কিণ্ডল এবং মোবাইলে কপি করে রাখি। যখন যেটা সাথে থাকে সেখান থেকে পড়া এগিয়ে নিতে পারি। আবার কখনো দেখা গেছে তিন ডিভাইসে তিন রকমের বই পড়ছি। কোনটায় উপন্যাস, কোনটায় ছোটগল্প, কোথাও বা ইতিহাস। আবার সবসময় ডিভাইসে পড়াশোনা করা চোখের জন্য আরামদায়ক নয়। বিশেষ করে মোবাইল বা ল্যাপটপে। এই দুটো মাধ্যমে পড়া উচিত আপদকালীন সময়ে, যখন হার্ডকপি বা কিণ্ডলে পড়ার সুযোগ নেই তখন। রাতে ঘুম আসছে না, শুয়ে শুয়ে আবোলতাবোল চিন্তা করে মাথানষ্ট না করে অন্ধকারে মোবাইলটা হাতড়ে তুলে নেই। ডার্ক মোড চালু করে ইপাব ফরমেটের কোন বই পড়তে শুরু করি। পড়তে পড়তে একসময় চোখের ক্লান্তিতে ঘুম জড়িয়ে আসে।

সবশেষ কথা হচ্ছে বই পড়ার জন্য আলাদা সময় কোন কর্মজীবি মানুষেরই থাকে না। কিন্তু ইচ্ছেটা থাকলে পড়ার সময়টা কোন না কোন খাত থেকে চুরি করে নেয়া সম্ভব। দিনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে অন্তত ২ ঘন্টা বইয়ের জন্য বরাদ্দ করা তেমন কোন কঠিন কাজ নয়। কঠিন হলো ‘ইচ্ছে’টা জন্মানো। যাদের ‘ইচ্ছে’ নেই তাদের বই পড়ার সময় কখনো হবে না।

Share this post

বই আছে, সময় নেই

www.porua.net
Share
Previous
Next
Comments
Top
New
Community

No posts

Ready for more?

© 2023 Riton Khan
Privacy ∙ Terms ∙ Collection notice
Start WritingGet the app
Substack is the home for great writing