বই হোক সই
কেয়া ওয়াহিদ | জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য বই অত্যাবশকীয় এক অনুষঙ্গ। যত বেশি বই পড়া যায় তত বেশি নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। এ এক অপ্রতিদ্বন্দী অর্জন। এই জ্ঞান কখনো নিঃশ্বেষ হয়না। বই মানসিক চাপ কমাতে সাহা
নির্মল আনন্দ দানে বই হলো নিরাপদ সঙ্গী। এই সঙ্গীর সাথে সারা জীবন কাটানো যায় নিঃসংকোচ, নির্ভেজাল, নির্ভয়ে। বই পড়লে মানুষ অপেক্ষাকৃত মানবিক ও মহৎ হয়, আজকের এই পৃথিবীতে এটা খুব জরুরি। বই পাঠ মনের কলুষতা দূর করে, ন্যায়-অন্যায় বোধ প্রখর হয়। এর সান্নিধ্যে ঘটে আত্মশুদ্ধি, আত্মোপলব্ধি! যথার্থ বলেছেন ব্রিটিশ লেখক 'ভার্জিনিয়া উলফ': "Books are the mirrors of the soul."
জ্ঞান ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করার জন্য বই অত্যাবশকীয় এক অনুষঙ্গ। যত বেশি বই পড়া যায় তত বেশি নিজেকে সমৃদ্ধ করা যায়। এ এক অপ্রতিদ্বন্দী অর্জন। এই জ্ঞান কখনো নিঃশ্বেষ হয়না। বই মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। হৃদয়কে রাখে আলোকিত উদ্ভাসিত। বই পড়লে অভিজ্ঞতার দিগন্ত প্রসারিত হয়। আলোকিত মানুষ, পরিবার, সমাজ গড়তে হলে চেতনাযন্ত্র সক্রিয় ও সচেতন থাকা চাই। আর এর পেছনে বই পড়ার যথেষ্ট ভূমিকা আছে। আর যারা লেখালেখি করেন, তাঁদের তো অবশ্যই বই পড়া উচিত। তাঁদের জন্য বই মৌলিক চাহিদার মতো একটি। কল্পনার বিস্তৃতি, শব্দভাণ্ডার সমৃদ্ধি এবং দক্ষ লেখনী শৈলীর জন্য বই পড়ার বিকল্প নেই। ভালো পাঠক না হলে ভালো লেখক হওয়া অসম্ভব।
সৃষ্টিশীল ও মননশীল প্রজন্ম গঠনে বই পড়া অপরিহার্য। শিশু-তরুণদের পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়ার অভ্যাস থাকা জরুরি। বই বাস্তবতা সম্পর্কে ধারণা দেয়। জীবন বোধ এবং অনুভূতিকে শাণিত করে। ভাবনার আকাশের দ্বার উন্মোচনের জন্য বই পড়া উচিত। নিরেট আনন্দের উপাদানও হতে পারে বই। খুব গুরুত্বপূর্ণ শিশুদেরকে ছোটবেলা থেকে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করা। সব বাচ্চা যে বিষয়টা গ্রহন করবে তা নয়। তবে আমাদের অবশ্যই চেষ্টা করা উচিত। আজকের এই উন্নত প্রযুক্তির বিশ্বে শিশুদের বইমুখী করা একটু কঠিন বটে। ডিভাসের চলমান দৃশ্য বা ঘটনাগুলো তাদেরকে সহজে আকর্ষিত ও উদ্বুদ্ধ করে, কম পরিশ্রম বোধগম্য করে তোলে। অপরদিকে বই পড়লে চিন্তাশক্তির ব্যবহার করতে হয়, বোধগম্যতা তৈরি করতে মস্তিষ্কে কখনো বাড়তি চাপ নিতে হয়। এই আলস্যে তারা হয়ত বইপড়া এড়াতে চায়। কিন্তু বই পড়া যদি উপভোগ্য হয়ে ওঠে, তাহলে আর কোনো চিন্তা নেই! পাঠ অর্জিত জ্ঞান দীর্ঘস্থায়ী আশীর্বাদ হয়ে থাকবে তাদের জীবনে। তাই পাঠোভ্যাসের শুরুটা যেন উৎসাহ,আনন্দের হয়। জোরপূর্বক নয়, বরং শিশুদেরকে একটা নিয়মের মধ্যে ফেলে দিতে হবে। নিয়মিত চর্চা ও সময় যাপনে বিষয়টা অভ্যাসগত হয়ে উঠবে। বই পড়লে শিশুদের আচরণ নমনীয় হয়। মস্তিষ্কের সুস্থ স্বাভাবিক বিকাশের জন্যও বই পড়া প্রয়োজন।
"আমরা যখন বই সংগ্রহ করি, তখন আমরা আনন্দকেই সংগ্রহ করি।" ভিনসেন্ট স্টারেট'র এই উক্তির সাথে অনেকেই একমত হবেন। নইলে বইমেলা, বই প্রকাশ, সাহিত্যচর্চা ইত্যাদি আজ এতটা এগোতো না। অনেকের মতো আমিও নতুন বই সংগ্রহ করতে আনন্দ পাই। বই হাতে পাওয়া মাত্র শুঁকে দেখা, পাতা উল্টে উল্টে যে কোনো একটা পাতা থেকে পড়তে শুরু করা, ফ্ল্যাপ পড়া, ইত্যাদি...। এভাবে পরিচয় পর্ব শেষে বইটা হয়ত তুলে রাখলাম। তারপর হাতের কাজ শেষ করে এককাপ চা নিয়ে কাউচে আরাম করে বসা। কুশনে হেলান দিয়ে শুরু করি পাঠ অবগাহন। সাথে একটা পেন্সিল থাকতেই হবে পছন্দের লাইনগুলো দাগ দেয়ার জন্য। পাঠঘোরে দুপুরের ভাতঘুম ছেড়ে যায় চিলেকোঠায়, বিকেল শেষে সন্ধ্যার পিলসুজের আলো জ্বলে ওঠে বইয়ের পাতায়। বই সংগ্রহের চাইতে পাঠের আনন্দ আসলেই দ্বিগুণ!
হয়তো বলবেন, আমাদের ব্যস্ততাবিদুর জীবন, বই পড়ার সময় কই? কারো কারো পুরো জীবনটাই সংগ্রামী বিষাদ বেদনার গল্পে ভরা অতীত কিংবা বর্তমান। এমন জীবনে বই পড়ার ইচ্ছা থাকলেও মানসিক অবস্থা থাকেনা। তবুও বলব কেউ চাইলে অবশ্যই সেটা সম্ভব। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিংবা বাসে বা ট্রেনে অনায়াসে একটু পড়া যায়, ইচ্ছাশক্তিটাই বড়। আমি মনে করি সংসার, সন্তানকে সময় দেয়ার সাথে সাথে প্রত্যেকটা মানুষকে নিজেকে একটু সময় দেয়া উচিত, সেটা যদি বইয়ের সাথে কাটানো যায়, তাহলে মন্দ হয়না। বই পড়লে ব্যথার উপশম হয়। বইই পারে হতাশা, অতৃপ্তি, ব্যর্থতা ভুলিয়ে রাখতে। যেমনটা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন: "বই পড়াকে যথার্থ হিসেবে যে সঙ্গী করে নিতে পারে, তার জীবনের দুঃখ কষ্টের বোঝা অনেক কমে যায়।"
অতএব- আসুন বই পড়ি, বই হোক আমাদের একান্ত সঙ্গী-সই!