ঋতুপর্ণ ঘোষের একটা লেখা পড়েছিলাম- উদ্ধৃতি দেই-
" পুজোর কোনও গন্ধ আছে বুঝি? কে জানে, আমি তাে পাই। বাড়ির লাগােয়া পুজো প্যান্ডেলের ত্রিপলের গন্ধ, বাঁশ আর রঙিন কুঁচির কাপড়ের নিজস্ব গন্ধ, তারপর ধুপধুনাে, ফুল- নতুন শাড়ি। সকালবেলার সদ্য শ্যাম্পু করা একপিঠ চুল- সে সব গন্ধ তাে আছেই।"
ঋতুবাবুর লেখা পড়ে হিংসে হয়। একে তো আমি যবন বালিকা, তায় ইটকাঠের জাদুর শহরে বেড়ে ওঠা মানুষ। পুজোর এই আবেশটা আমি কোনোদিন পাইনি। আমার কাছে ছোটোবেলা বড়বেলায় দেবী দুর্গার আগমনী ঘন্টা বাজিয়ে যায় একটিই জিনিস- পুজোসংখ্যা।
ছোটোবেলার একটা স্মৃতি খুব স্পষ্ট করে মনে পড়ে। পুজো আর ইদের একমাসী বন্ধ পড়েছে, বাসার সবাই বাক্স প্যাটরা গোছগাছ করছে-দেশের বাড়ি যাওয়া হবে। আর যাওয়ার ঠিক আগেরদিন বাবার হাত ধরে আমি মৌচাক মার্কেটের লাইব্রেরিতে ছুটছি- ছুটি সিরিজের নতুন বই কিনতে। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্পাদনা করা এই বইগুলো পুজোর আগে আগে বের হতো। আগামী একমাসের জন্য এই বই ছিল মোটামুটি আমার যক্ষের ধন।
দিন গড়ালো, গল্প কবিতা পড়ার অভ্যেস বাড়লো, ছুটি সিরিজ হারিয়ে গেল, অন্যান্য বইয়ের দিকে ঝুঁকলাম। কিন্তু শরত-দুর্গাপুজো-কাশফুল-ছুটির সমার্থক হয়ে পুজোসংখ্যা গুলো কেমন যেন রক্তে মিশে গেল। এখনো নতুন পুরনো পুজোসংখ্যা দেখলে হাত নিশপিশ করে। বন্ধুর ভাণ্ডার থেকে এই বইটি "মেরে" দিতে তাই একটুও খারাপ লাগেনি।
বইয়ের বিবরণ? টিপিক্যাল পুজো সংখ্যা, যার বায়াত্তর ভাগ বিজ্ঞাপন। এচোঁড় রান্নার রেসিপি থেকে বঙ্গভঙ্গ রদ বিষয়ক খটমটে ভাষণী- কি নেই এতে। অবসর সময় দিব্যি কেটে যাবে যদি চা-মুড়ি নিয়ে লেপ পায়ে জড়িয়ে বইটা নিয়ে বসে পড়েন। এই আধো-শীত আধো-রোদে ঘেরা মাঘের অন্তরঙ্গ দুপুরবেলায় আর কি চাই!