পড়ুয়া

Share this post

গল্পগুলো বাঙময়

www.porua.net

Discover more from পড়ুয়া

বই নিয়ে পাঠকের আনন্দ-বেদনার স্মৃতিগুলো প্রকাশের তেমন সুযোগ থাকে না। পাঠকের বলা না হয়ে ওঠা সেইসব কথাগুলো প্রকাশের ভাবনা থেকে আমরা শুরু করছি পাঠকের জন্য "পড়ুয়া"।
Over 2,000 subscribers
Continue reading
Sign in

গল্পগুলো বাঙময়

ফারহানা নীলা

Apr 24, 2023
Share this post

গল্পগুলো বাঙময়

www.porua.net
Share
view of floating open book from stacked books in library
Photo by Jaredd Craig on Unsplash

শতবর্ষের প্রাচীন সেই বাড়িতে ঝোপঝাড় কেটে বসবাসের উপযোগী করা হয়।

আম্মা রান্না করে ঘেমে নেয়ে। চঞ্চল তিনজন পিঠোপিঠি ভাইবোন। মায়ের ফুসরত নেই। সারাদিন ব্যস্ত সময়ের মাঝে আমাদের লেখাপড়ার দায়িত্ব পালন করে আম্মা।

পড়ুয়া is a reader-supported publication. To receive new posts and support my work, consider becoming a free or paid subscriber.

আম্মার কাছে গল্প শোনা তেমন হয়নি আমাদের। গান শুনতাম মাঝেমধ্যে কাজের ফাঁকে গুনগুন।

মাটিতে বিছানো পাটিতে তিনজন খাতা পেন্সিল আর ইরেজার নিয়ে বসি( আমরা অবশ্য রাবার বলতাম)

মফস্বল শহরে ইলেকট্রিসিটি ছিল যেন অধরা সে স্বপন।

আম্মার চুলায় তরকারি, হাতে হাতপাখা আমাদের শরীরে আলতোভাবে বাতাস দেয়।

আমরা শ্রুতি লিখন লিখছি।

আম্মার সামনে বই মেলে রাখা।

" তারপর সিভকা বুরকা যাদুকা লাড়কা"

হাতের লেখা সুন্দর হতে হবে,বানান হতে হবে নির্ভুল এবং দ্রুত লিখতে হবে।

সেইসব সময়ে আমাদের মনে গেঁথে যায় সেরিওজা,খুদে ইভান কিংবা বুদ্ধিমতি মাশা।

ইকথিয়ান্ডর আমাদের বুকে বেঁধে কষ্ট হয়ে।

দ্রুত পঠনের পাঠও চলে রূপকথার গল্পের বই কিংবা রুশদেশের উপকথা থেকে।

আম্মা গল্পের বই পড়তে দেয়। আমরা গল্প পড়ি আর গল্পের জাল বুনি। শূন্যস্থান পূরণের জন্য আম্মা ডটডট দিয়ে লিখে রাখে।

আমরা শূন্য স্থান পূরণ করি আর গল্প আমাদের নিয়ে যায় গল্পের থেকে দূরে আরেক অচেনা পথে।

আমাদের মধ্যে আম্মা বুনে দেয় গল্পের বীজ।

মধ্যবিত্ত সংসারে আমাদের প্রাচুর্য ছিল থরে থরে সাজানো গল্পের বই।

আব্বার মাথার কাছে সবসময়ই বই থাকতো। প্রাচীন বাড়িটার স্যাঁতসেঁতে দেয়ালে বইয়ের তাক। ছাদ ফুটো হয়ে পানি ঝরে বৃষ্টি এলেই।

উঁইপোকাদের অযাচিত তাণ্ডব চলে বইয়ের তাক জুড়ে।

আম্মার সাথে বসে উঁইপোকার নির্দয়তা দেখি। বইগুলো যেন খুবলে খেয়েছে।

ততদিনে আমরা একটু একটু করে বড় হই। নিষিদ্ধ গন্ধমের মতো বড়দের বই টানে। আব্বার মাথার কাছ থেকে নিয়ে গোগ্রাসে পড়ি মেমসাহেব, শরৎচন্দ্র,বঙ্কিম, জরাসন্ধ, আশাপূর্ণা, নীহার রঞ্জন, মানিক আরও কত বই। এসবই লুকিয়ে পড়ি। পড়ার বইয়ের নিচে গল্পের বই। হয়তো তখন ইঁচড়ে পাকতে শুরু করেছি।

এরপর ভাইয়া স্কুল থেকে একরাতের চুক্তিতে গল্পের বই আনে। দস্যু বনহুর, কুয়াশা, মাসুদ রানা। ভাইয়া আর আমি পালা করে পড়ি। সকালেই স্কুলে বইটি ফেরত দিতে হবে। নইলে পরের বইটি পাওয়া যাবে না।

স্কুলে ক্লাশে প্রথম হই প্রতিবার। পুরস্কার হিসেবে বই নিয়ে বাসায় ফিরি। ভাইরাও বই পুরস্কার পায়। আমাদের নিজস্ব বইয়ের সংখ্যা বাড়তে থাকে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বই পাওয়ার যাত্রা শুরু হয়।

বাড়িতে একটা নতুন বইয়ের আলমারির আগমন ঘটে।

মালাকাইটের ঝাঁপি থেকে গল্পগুলো আমাদের মনে বাসা বাঁধে।

এখন গল্পেরা সাজে কলমে। বাংলার কোনো কিছু লিখতে গেলেই আমরা গল্প বলি খাতায়। পরীক্ষার খাতায় নম্বরের ছড়াছড়ি তখন। গল্প বলা শিখেছি কি তবে?

জন্মদিন নিয়ে কোনো বাড়াবাড়ি ছিল না আমাদের সময়ে। তবে আব্বা গল্পের বই কিনে দিত।

পাবনা নিউমার্কেটে বিকিকিনি মার্টে আরজু ভাইয়ের দোকানে বসে পড়ে ফেলি নতুন কোনো বই।

সেইসব সময়ে বিয়ের দাওয়াত হতো দুপুরে সাধারণত। মফস্বল শহরের বিয়ে মানেই দিনের মধ্যে শেষ করতে হবে সব আয়োজন। খাকি কাগজে মোড়ানো প্যাকেটে গল্পের বই কিনে আনে আব্বা। তখন মসুলমানির অনুষ্ঠান বেশ হতো। কাঁসার ঘটিবাটি ছিল আভিজাত্যপূর্ণ উপহার। আব্বা দিত বই।

গল্প তো ধীরে ধীরে জন্ম নেয় মনে। গল্প বলাটাও তো শিখতে হয়। চারপাশে আজকাল এতো এতো গল্প ঘিরে থাকে-- কোনটা রেখে কোনটা বলি? জীবন তো গল্পের সমষ্টি। সব গল্প হয়তো গল্পের নয়,সব গল্প হয়তো বলার নয়। কিন্তু মনের ভেতর গল্পগুলো আছে। কখনও ঘুম পাড়ানো গানের মতো ঘুম পাড়িয়ে রাখি।

আমরা নিজেরাই বাঙময় গল্পের ক্যানভাস। কেউ পড়ে, কেউ পড়ে না অথবা পড়তে পারার সক্ষমতা সবার থাকে না।

প্রাচীন বাড়িটার পরতে পরতে গল্পের আসর বসে আজও। দূরে থেকেও সেই গল্প শুনি।

আর আমি গল্প বলি-- বলে যাই গল্পের মতন কোনো গল্প যেখানে জীবন এসে ছায়া ফেলে। হাঁটু গেড়ে বসে থাকে অনেক না বলা গল্প ভীষণ ব্যথা হয়ে।

একদিন মাধবীলতা হব বলে জীবন হেসেছিল। ন হন্যতে, হাজার চুরাশির মা অথবা পদ্মা নদীর মাঝি-- আজও উঁকি দিয়ে চলে যায় আলগোছে। সবিনয় নিবেদন আজও আমাকে চিঠি লেখায়। বারবার প্রেমে পড়ি আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেকেই দেখি। আমার ভেতর ঘুমন্ত নগরে জেগে থাকে গল্পগুলো। আমাকে জাগিয়ে রাখে। জাগিয়ে রাখে উত্তর পঞ্চাশ।

গল্পের বই শুধু নয় কবিতা, প্রবন্ধ, ইতিহাস, ভূগোল -- সব মিলিয়ে গোলমেলে আমি বইয়ের জগতে খাবি খাই।

এতো এতো কথা বলি কিন্তু গল্প কেন হয় না? অথবা গল্প বলি কেন সত্যর মতন লাগে?

আমার উপর ভর করে মাধুকরী, দূরবীন, পার্থিব,সাতকাহন, কালবেলা, কাল পুরুষ, উত্তরাধিকার, টেনিদা,প্রথম প্রতিশ্রুতি, লোটা কম্বল আরও আরও কত বই।

বিশ্রুত গল্পের আমি আমাকেই পাঠ করি বারংবার -- আবার।

‘বাবা যখন ছোট’ বইটি আমাকে কাঁদায়। গল্পে আঁকা জীবনের জলছবি পাঠকের কাছে কখনও ফকফকা শাদা আবার কখনও বিমূর্ত।

যে গল্প এক পাঠে শেষ হয় না, যে গল্পের চৌম্বক ক্ষেত্রে আমি ধাতব খণ্ড সেই গল্পে অবগাহনের সুখ।

"আহা লোহা ঠান্ডা হবার আগেই আকার দিতে হয় "--এটাও তো গল্প! নয় কি?

আমার মধ্যে জাগে দূর্গা -- অপুর জন্য ভালোবাসা রাখি আঁচলের গিঁটে।

সমসাময়িক লেখকদের গল্প পড়ছি আর ভাবছি। গল্পের নবায়ন কী সুন্দর! একেকটা গল্প তো নতুন আঙ্গিকে ফিরে ফিরে আসে। আমাদের চেতনার রং মাখে চুনি পান্না। নীলকণ্ঠ পাখিদের নীড়ে ফেরার সময় আমি কেন আজও গল্প খুঁজি? কেন হত্যে দিয়ে গল্প বুনি?

পড়ুয়া is a reader-supported publication. To receive new posts and support my work, consider becoming a free or paid subscriber.

Share this post

গল্পগুলো বাঙময়

www.porua.net
Share
Previous
Next
Comments
Top
New
Community

No posts

Ready for more?

© 2023 Riton Khan
Privacy ∙ Terms ∙ Collection notice
Start WritingGet the app
Substack is the home for great writing