

Discover more from পড়ুয়া
বোভোয়া হয়ে ওঠা: জীবনালেখ্য - কেট কার্কপ্যাট্রিক
বিংশ শতাব্দীর একজন দার্শনিক, যার জীবন নিয়ে অতিশয় রাজনীতি করা হয়েছে, তাঁর নারীবাদ বা “নিকৃষ্টতম কাজের” মূল্যায়ন করা সহজ নয়। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ধরনের নারীবাদের আবির্ভাব ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে
পর্যালোচনা
মূল রচনা
Was Simone de Beauvoir as feminist as we thought?
By Kate Kirkpatrick
The Guardian, Aug. 20, 2019
সিমোন দ্য বোভোয়া নারীবাদের একজন প্রতিমূর্তি। সাধারণ কোনো নারীবাদী গ্রন্থ নয়, বরং নারীবাদী আন্দোলনের বাইবেল হিসেবে খ্যাত “দ্য সেকেন্ড সেক্স” (দ্বিতীয় লিঙ্গ) গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন তিনি। বোভোয়া ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ বুদ্ধিজীবী, যিনি তাঁর দর্শন ও সাহিত্যসৃষ্টির ক্ষমতাকে বাস্তব জগতের রাজনৈতিক কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত করে স্থায়ী আইনগত পরিবর্তন সাধন করতে পেরেছিলেন। তাঁর জীবনধারা কয়েক প্রজন্মের নারীদের মুক্তির সন্ধানে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। বোভোয়ার সাথে দার্শনিক জাঁ পল সার্ত্রের প্রথাবহির্ভূত সম্পর্ককে এর একটি প্রধান কারণ হিসেব গণ্য করা হয়। এই সম্পর্ককে এমন একধরনের প্রেম বলে মনে করা হয় যার জন্য তিনি ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বা পেশাগত সাফল্য বিসর্জন দেননি।
তবে ১৯৮৬ সালে বোভোয়ার মৃত্যু পরবর্তী কয়েক দশকে ইতোপূর্বে অপ্রকাশিত বেশ কিছু চিঠি, ডাইরি ও পাণ্ডুলিপি সেইসব পাঠকদের চমকে দেয় যাদের ধারণা ছিলো তারা বোভোয়াকে ভালোভাবে চিনতে পেরেছেন। আমেরিকান প্রেমিক নেলসন আলগ্রেনের কাছে বোভোয়ার চিঠির মাধ্যমে অন্য একজন পুরুষের প্রতি তাঁর আবেগের গভীরতা প্রকাশ পায়। সার্ত্রের কাছে লেখা বোভোয়ার চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, তিনি শুধু সমকামী সম্পর্কে জড়িত ছিলেন না, তাঁর সঙ্গীরা অল্প বয়সের ছিলো এবং শিক্ষার্থীদের সাথেও সম্পর্ক ছিলো বোভোয়ার। এখন কোনো সন্দেহ নেই যে, বোভোয়া তাঁর আত্মজীবনীর গল্পে তাঁর গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত সাফল্য ও গভীর নৈতিক পরাজয়ের কথা প্রকাশ করেন নি। সেক্ষেত্রে “দ্য সেকেন্ড সেক্স” প্রকাশিত হওয়ার ৭০ বছর পর গ্রন্থটির লেখক সম্পর্কে আমরা কি ধারণা পোষণ করবো? তিনি যে বিষয়গুলি উল্লেখ করেননি, তার আলোকে তিনি কি ততোটা নারীবাদী ছিলেন যতোটা আমরা মনে করি?
এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর কি? বিষয়টি মূলত নির্ভর করছে নারীবাদী হওয়া বলতে কী বোঝায় এবং আপনার মনে বোভোয়া সম্পর্কে কোন ধারণা রয়েছে তার উপর। (দীর্ঘ উত্তরের জন্য একটি বই লেখার প্রয়োজন হয়েছে) তবে এটি এখন পরিষ্কার যে, বোভোয়ার সবচেয়ে প্রশ্নবিদ্ধ মুহূর্তগুলি তাঁর বিশ্বাস পরিবর্তনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তিনি নিজের কার্যকলাপের নিন্দা করার পাশাপাশি তাঁর ও সার্ত্রের সবচেয়ে সমালোচিত আচরণ সমর্থনকারী দর্শন প্রত্যাখ্যান করেছেন। সময়ের সাথে সাথে তিনি ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রের নারীবাদী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। বোভোয়ার জীবনে এমন কিছু অধ্যায় রয়েছে যেগুলিকে যতোটা-না যৌন স্বাধীনতার দৃষ্টান্ত হিসেবে পাঠ করা যায়, তার চেয়ে বেশি লিঙ্গবৈষম্যের উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে এমন দৃষ্টান্তও রয়েছে যেখানে তিনি এগুলির সমালোচনা করেছেন। এমনকি এই সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি নিজেকে দোষারোপও করেছেন। তাঁর জীবনধারা এমন একটি প্রশ্ন উত্থাপন করে যেটিকে কেন্দ্র করে তিনি জীবনযাপন করেছেন: আমাদের মূল্যায়ন কি আমাদের সামগ্রিক কার্যকলাপের ভিত্তিতে, নাকি সামগ্রিক নিকৃষ্টতম আচরণের ভিত্তিতে?
বিংশ শতাব্দীর একজন দার্শনিক, যার জীবন নিয়ে অতিশয় রাজনীতি করা হয়েছে, তাঁর নারীবাদ বা “নিকৃষ্টতম কাজের” মূল্যায়ন করা সহজ নয়। বিংশ ও একবিংশ শতাব্দীতে বিভিন্ন ধরনের নারীবাদের আবির্ভাব ঘটেছে। অনেক ক্ষেত্রে এই মতবাদগুলি পরস্পরবিরোধী। এমনকি আগের প্রজন্মের নারীবাদীদের প্রচেষ্টা (বা সমসাময়িক অন্যান্য প্রচেষ্টা) কতোটা অসম্পূর্ণ তা দেখানোর জন্য এসব নারীবাদী মতবাদে প্রগতিশীলতার আখ্যান তৈরি করা হয়েছে। প্রগতিশীলতার এই আখ্যানগুলিতে ভিন্ন রাজনৈতিক ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের কারণে পরস্পরের মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। যেমন, যুক্তরাজ্য ২০১৮ সালে (বিবাহিত ও ত্রিশোর্ধ) নারীর ভোটাধিকারের শতবার্ষিকী পালন করেছে। কিন্তু ফ্রান্সে নারীরা ভোটাধিকার লাভ করে যুক্তরাজ্যের চেয়ে আড়াই দশক পরে অর্থাৎ ১৯৪৪ সালে। তাই ১৯৪৯ সালে “দ্য সেকেন্ড সেক্স” কীভাবে গৃহিত হয়েছিলো তা অনুসন্ধান করার সময় জেনে বিস্মিত হতে হয় যে, বইটি এবং সার্বিকভাবে নারীবাদ সেই সময় পুরানো ও গতানুগতিক হিসাবে বিবেচিত হয়েছিলো।
সেই বিস্ময় পর্যায়ক্রমে সন্দেহে পরিণত হয় যখন বোভোয়ার লেখার সমালোচনায় কিছু নির্দিষ্ট বিষয় উঠে আসতে দেখা যায়। “নারীবাদকে তখনো প্রাসঙ্গিক” মনে করা, উপন্যাসের প্রধান চরিত্রে নারীদের রাখা ও নারীদের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে অতিরিক্ত প্রাধান্য দেবার কারণে বোভোয়াকে বারবার সমালোচকদের রোষানলে পড়তে হয়। আলোচকদের প্রশ্ন ছিলো “পুরুষদের বিষয়ে আলোচনা কোথায়?”। তারা সেই বোভোয়াকে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করতো যে তাদেরকে সার্ত্রের সাথে থাকার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানাতো। তারা বোভোয়ার সেই নারীসত্তাকে পছন্দ করতো যার মুক্ত প্রেমের কল্পকাহিনি তাদের কল্পনার আগুনকে উসকে দিতো।
ফরাসী সাহিত্যের পণ্ডিত ও দার্শনিকরা বোভোয়ার বুদ্ধিবৃত্তিক গুরুত্ব ও স্বাধীনচেতা স্বভাবকে কয়েক দশক ধরে স্বীকৃতি জানিয়েছেন। কিন্তু তাঁর জীবনের উপস্থাপনা বড্ড বেশি নিবদ্ধ যৌবনের প্রথম পর্যায়ে তিনি যখন সার্ত্রের সাথে কিংবদন্তীতুল্য রোম্যান্টিক “চুক্তিতে” আবদ্ধ হয়েছিলেন । ১৯২৯ সালে এক দিন কারুসেল দু ল্যুভর-এ তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন যে, তাঁদের সম্পর্ক হবে উন্মুক্ত, অন্য কাউকে ত্যাগ করার প্রশ্ন সেখানে থাকবে না। তাঁরা একে অপরের জন্য “অত্যাবশ্যকীয়” হলেও “প্রয়োজনে” অন্য প্রেমিক বা প্রেমিকাও রাখতে পারবেন। ১৯২৯ সালের এই ধরনের সম্পর্ক খুব অদ্ভুত ছিল, এবং আজ অবধি পাঠকদের ভাবিয়ে তুলছে।
সার্ত্রের সাথে দেখা হওয়ার আগে ও পরে বোভোয়ার নিজস্ব দর্শনের প্রতি তুলনায় অতটা নজর দেওয়া হয়নি। এই দিকটি নতুনভাবে প্রকাশিত তাঁর ডাইরি ও চিঠি আলোকিত করেছে বলেই তাঁর জীবন ও আদর্শ পুনর্মূল্যায়নে বিশেষ আগ্রহের সৃষ্টি করে। কলঙ্কিত হোক বা না হোক, তিনি এমন একজন নারী ছিলেন যিনি দাবি করেছিলেন যে, নারীদের জীবনকে যৌন উদ্দীপক কিছু প্লটে সীমাবদ্ধ করা উচিৎ নয়। অথচ তাঁর জীবন অনবরত একটি যৌন উদ্দীপক প্লট হিসেবে খণ্ডিত দৃষ্টিতে দেখা হয়েছে। এছাড়া তিনি নারীবাদ নিয়ে যা বলেছেন তা বারবার মানুষকে ক্ষুব্ধ করেছে। কিন্তু তিনি যদি সত্যিই পুরানো ধ্যানধারণা নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে থাকেন, তাহলে তাঁকে নিয়ে ক্ষোভের কি আছে?
তাঁর কল্পিত মোহময় ব্যক্তিত্বের পিছনে এমন একজন দার্শনিক ছিলেন যিনি চাইতেন নারীর “নিজের পছন্দ অনুযায়ী নিজেকে চালনার স্বাধীনতা”। মানুষের পরিচয় হলো “তার কার্যকলাপের সমষ্টি”। তিনি মনে করতেন যে আমরা প্রত্যেকে এমন কথা ভেবে স্বস্তি পাই যে আমাদের প্রত্যেকের একটি পূর্বনির্ধারিত নিয়তি রয়েছে, আমাদের প্রতিটি অস্তিত্বের পেছনে আলাদা কারণ রয়েছে যেটা আমাদের অস্তিত্বকে যথার্থ করে তোলে। কিন্তু এই ধারণা অমূলক। বোভোয়া মনে করেন, একজন মানুষের পরিণত হয়ে ওঠার পিছনে কোনো নকশা বা পরিকল্পনা নেই। ১৯২০-এর দশকের শেষদিকে সার্ত্রের সাথে দেখা হওয়ার আগে তিনি এই ধারণাটিকে বিস্তারিতভাবে তৈরি করা শুরু করেন। সার্ত্রের সাথে তাঁর দর্শনবিষয়ক দ্বিমত প্রকাশ করা শুরু করেন ১৯৪০-এর দশকে। কিন্তু তাঁরা দুইজনই ফ্রান্সে বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন এবং তাঁর ধারণাকে অনেক সময় সার্ত্রের বলে বিবেচনা করা হতো। (ফ্রান্সের বাইরে তখনো বোভোয়ার গুরুত্বপূর্ণ লেখাগুলি অনুবাদ করা হয়নি।)
১৯৩০-এর দশক ও ১৯৪০-এর দশকের গোড়ার দিকে নারীদের সাথে বোভোয়ার সম্পর্কের ভিত্তি হিসেবে যে দৃষ্টিভঙ্গি কাজ করেছিলো তা প্রত্যাখ্যান করার পর তিনি নিজের নৈতিকতার ভিত গড়ে তোলেন। এই নৈতিক ধারণা “দ্য সেকেন্ড সেক্স”-এর দার্শনিক ভিত্তি প্রস্তুত করেছিলো। এখানে তিনি দাবি করেন যে, ব্যক্তির অস্তিত্বের ন্যায্যতা কামনা নারী ও পুরুষকে ভিন্নভিন্নভাবে প্রভাবিত করে, কারণ নারীর কাছে প্রত্যাশা করা হয় সে অন্যকে ভালোবাসার মাধ্যমে আপন অস্তিত্বের যথার্থতা প্রমাণ করবে। বোভোয়া যুক্তি দেখান, একজন নারী হয়ে ওঠা কিছু বিশিষ্ট কারণে কঠিন, কারণ ইতিহাস, সাহিত্য, মনোবিজ্ঞান ও জীববিজ্ঞান নারীদের স্বাধীন, ভ্রমপ্রবণ ও পরিপূর্ণ মানুষ হতে বলার বদলে তাদের কাছে নারীত্বের সঙ্গতিহীন কাল্পনিক রূপকথা উপস্থাপন করেছে।
১৯৪৯ সালে বোভোয়ার সমালোচকরা তাঁকে নারী-বিরোধী, মাতৃত্ব-বিরোধী ও বিবাহ-বিরোধী বলে আখ্যায়িত করেন। তিনি মনে করতেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড নারীদের সাহায্য করতে পারে। কিন্তু শুধু এই কর্মকাণ্ড নারীদের স্বাধীন করতে পারে বলে তিনি মনে করতেন না। বিবাহ ও মাতৃত্বের কোনো মূল্য নেই বলেও তিনি ভাবতেন না। “দ্য সেকেন্ড সেক্স” লেখার উদ্দেশ্যে ছিলো নারীর মাঝে আপন দৃষ্টিতে পৃথিবীকে দেখবার আত্মবিশ্বাস জাগ্রত করা। বইটির মাধ্যমে তিনি চেয়েছিলেন নারী উপলব্ধি করুক যে তার স্বাধীনতা তার অমূল্য অধিকার। এই বিষয়টিকে তিনি পরবর্তী সময়ে “আত্মসম্বন্ধ” হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বোভোয়ার মতে, যেহেতু নারীরা নারীত্বের সঙ্গতিহীন কাল্পনিক মোহগ্রস্থ ধারণা অনুযায়ী সার্থকভাবে জীবনযাপন করতে পারে না, সেহেতু অনেক সময় নিজেদের ব্যর্থ মনে করে। জীবনযাপনের জন্য তারা কী চায় সেই কথাটা নিজেদের জিজ্ঞাসা করার পরিবর্তে অন্যরা যেমন চাইছে তেমন না হতে পারার জন্য তারা নিজেদের তিরস্কার করে।
বোভোয়ার উপন্যাসের নারী চরিত্রগুলি তাঁর নারীবাদী আদর্শের বিচারে ত্রুটিপূর্ণ বলে প্রায়ই উপন্যাসগুলির সমালোচনা করা হয়েছে। কিন্তু নারীত্বের চিরায়ত বেদনাদায়ক বৈশিষ্ট্যগুলির তালিকা প্রস্তুত করার পর তিনি নারীদেরকে নতুনভাবে রূপকথার মোহময় চরিত্রের মতো করে চিত্রায়িত করতে চাননি। তিনি এমন কোনো “শক্তিশালী নারী” চরিত্র সৃষ্টি করতে চাননি যা নারীদের মধ্যে বিভাজন ও অসম্পূর্ণতার অনুভূতি জাগিয়ে তুলবে। যে যুগে নারীদের জীবনের সম্ভাবনা আজকের যুগের থেকে ভিন্নভাবে বাধাগ্রস্ত হতো, তেমন যুগে তিনি চাইতেন তাঁর সমকালীন পাঠকরা স্বপ্ন দেখুক, ব্যর্থ হোক, আবার স্বপ্ন দেখুক এবং জানুক যে, এই ব্যর্থতা তাদেরকে ব্যর্থ করে তুলতে পারবে না।
আর যাই হোক না কেনো, বোভোয়ার নারীবাদে বিজয়ের কোনো আবহ নেই। নিজের গল্প লেখার সময় তিনি যে সাহিত্যকৌশল ব্যবহার করেছিলেন তা ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। চার খণ্ডের আত্মজীবনীতে তিনি জীবনের সেই সময়গুলি আড়াল করেছেন যখন তিনি নিজের আদর্শ রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আবার তিনি সেই সময়গুলিও আড়াল করেছেন যখন তিনি নিজের সম্পর্কে তাঁর স্বপ্নকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তিনি কখনোই সেই নারী হতে চেষ্টা করেননি যিনি নারীবাদের বাইবেল রচনা করবেন। যাপিত জীবনের পথে চলার পূর্বে সেই জীবনে কিছু বিষয় ছিল যেটা তিনি অন্যরকম চেয়েছিলেন। কিন্তু কোনকিছু “হয়ে উঠার” মূল সমস্যা হলো অতীতকে আর বদলানো সম্ভব নয়। ভবিষ্যতের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে আপনি অতীতের পুনর্বিবেচনা করতে পারেন মাত্র।
নিজের জীবন সম্পর্কে লেখার সময় বোভোয়া স্বীকার করেছেন যে, কিছু “অপরিহার্য সতর্কতা” সবকিছু বলার ক্ষেত্রে অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানান বিষয় উহ্য রাখার ফলে তার জীবন যে বিকৃত হয়েছে, সেটা বোভোয়া গোপন করেন নি।
কিন্তু এই কারণেই আবার তার সেইসব গোপনীয়তার আলোকে তার আত্মজীবনী পড়তে এত আগ্রহ হয়। ইংরেজি ‘ডিসটরশন (বিকৃতি)’ শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ “টরকুয়েরে” থেকে, যার অর্থ “মোচড়ানো” বা যন্ত্রণা দেওয়া”। ব্যক্তি হিসেবে বোভোয়াকে একটি বিকৃত ভাবমূর্তি নিয়েই কয়েক দশক ধরে জীবনযাপন করতে হয়েছে, এবং এর ফলাফল অনেক ক্ষেত্রে হয়েছে বিকৃত ও যন্ত্রণাদায়ক। তবে আপনি নারীবাদে বিজয়ের আবহ পছন্দ করুন বা স্বচ্ছ আত্মজীবনীতে স্বচ্ছতা পছন্দ করুন, নারীবাদের ইতিহাসে বোভোয়ার অধ্যায় উপেক্ষা সম্ভব নয়, সেটা বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সেটা শুধু বোভোয়া কী করেছেন আর কী ভেবেছেন সেই কারণেই নয়, তাঁর কার্যকলাপকে যেভাবে তাঁর চিন্তা থেকে দৃষ্টি সরানোর জন্য ব্যবহার করা হয়েছে সেজন্যও বটে।